বর্ণমালার মতো উড়ে গেল সে

একুশে ফেব্রুয়ারি (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

সকাল রয়
  • ৮৭
রাষ্ট্র ভাষা বাঙলা চাই!
শব্দ গুলো দেয়ালের পোস্টার ঝুলে আছে। আশে-পাশের দেয়াল গুলোতেও বিভিন্ন রঙের পোস্টারে ঢাকা। পোস্টার গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় শব্দ গুলো অনেক গর্জন, অপমান, অভিমান আর কষ্ট নিয়ে ঝুলে আছে। প্রতিদিনকার আগুন জ্বলা রোদ, অপ্রতিরুদ্ধ শব্দগুলোকে স্পর্শ বুলিয়ে গেলেও তার আবেদন এতটুকু ম্লান হয়ে যায় না। শব্দগুলো ক্যামন যেন চেয়ে থাকে!
ফরিদ বেশ ক’দিন ধরেই দেখছে অলি-গলি মোড়ে, রাস্তায়, কলেজের দেয়ালে ভাষার দাবী নিয়ে লেখা এসব রঙিন পোস্টার ঝুলে থাকে আর ভর দুপুরে একদল ছেলে-মেয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে-“মাতৃ ভাষা বাংলা চাই” “তোমার-আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা” সহ আরও অনেক স্লোগানে মুখরিত সব ব্যানার, ফেষ্টুন।
ফরিদ বাদাম বিক্রি করে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের আশে-পাশে মিটিং-মিছিল হলে পরে ওর বাদাম বিক্রি বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে, ক্যান্টিনের পাশে, ইডেন কলেজের সামনে ঘুরে বাদামের ঝুড়ি নিয়ে। বাড়িতে আছে ওর মা আর ছোট বোন। বাবা নিরুদ্দেশ। শেষ কবে যে বাবাকে দেখেছে মনে করতে পারে না। দশ বছর বয়েস পার হবার পর-পরই স্কুলের বই পত্তর গুটিয়ে রেখেছিল। অভাবের সংসারে লেখাপড়া হয়না। ওর মা হাত পাখা বানায়, ফেরি করে ফেরে রেলস্টেশনে। আছে ছোট বোন- টুনি। বয়েস সাতের ঘরে। সাত বছর বয়স আবদার করার বয়স, বোনের আবদার তাকেই মেটাতে হয়।

বেশ কদিন ধরেই রাস্তার রঙিন পোস্টার পড়তে পড়তে কলোনিতে ফিরে সে। পড়তে পড়তে বিরবির করে বলে, মাতৃ ভাষা বাঙলা চাই! “এহন তো আমরা বাঙলাতেই কথা কই, তাইলে আবার কোন বাঙলা চায় এরা?” হেইদিন যে জিন্না সাব, নাজিমুদ্দি সাব কইলো উর্দু ভাষায় কথা কইতে হইবো? হেইডাই মনে হয় বদলাইবার লাইগ্য পুস্টার আর মিছিল হয়তাছে। কিছুক্ষণ থেমে আবার বিরবির করে বলে,কি জানি! “উর্দু কওন অত সোজা না, আর লেহাও ম্যালা কসরতের ব্যাপার” আরবীর লাহান। মক্তবে পড়ার সময় হুজুর একটু শিখাইছিল। রাতে বাড়ি ফিরে মাকে জিজ্ঞেস করে ফরিদ, আম্মা বাঙলা ভাষা যদি না দেয়, তাইলে কি উর্দু দিয়া কথা কমু আমরা? মা বলে আরে ধুর; কি, যে কস না? জন্মের পর থেইক্কা কথা কইতাছি বাঙলা দিয়া আর এহন উর্দু কওন লাগবো। য্যান মামুর বাড়ির আবদার!

খাজা নাজিম উদ্দিন সাহেবের সমাবেশে বাদাম বিক্রি করে সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে ফরিদ। মাথায় ঘুরপাক খায়- ভাষা নাকি উর্দু হয়া যাইব তাহলে তো কইতে হইব, এ বাবু বাদাম লিবেন? বাদাম!
মাথা ভর্তি এসব কথা নিয়ে বাড়ি ফিরতেই ছোট বোন আবদার তুলে তার জন্য কুমার পাড়া থেকে পুতুল এনে দিতে হবে। ফরিদ সারাদিন ঘুরে বাদাম বিক্রি করে যে কয়টা টাকা পায়, তাতে রোজকার সওদা করে কিছুই থাকেনা। তবুও বোনকে আশ্বাস দেয়- টুনি তোর লাইগ্যা আমি পুতুল কিইনা আনুম, লাল পুতুল। আর কয়ডা দিন একটু সবুর কর বইন, ধর্মঘট শেষ হউক হেরপর।

আজ বাড়ি থেকে বেরুবার সময় মা বার বার নিষেধ করে দিয়েছে, মিছিল-হট্টগোলে একদম যাওয়া যাবে না। মা’র কথা ভাবলে তো বাদাম বিক্রি হবেনা, তাকে সবখানেই যেতে হবে। দুপুর বেলার কড়াকড়ে রোদ গায়ে মেখে ফরিদ বাদামের ঝুড়ি মাথায় তুলে জটলা পাকানো মিছিলে গিয়ে দাড়াঁয়। বাদাম ও বিক্রি হবে ভাষার জন্য একটু মিছিলও করা যাবে। সবার সাথে সেই হাত উচিয়ে স্লোগান দেয়, রাষ্ট্র ভাষা বাঙলা চাই!
সাধারণ জনতার ভীড় বাড়তে থাকে। মিছিল বড় হয় অজগর সাপের মতো। হাতে ব্যানার নিয়ে মিছিলে যোগ দেয় ছেলে-বুড়ো সব। দুর্দান্ত দাপটে মাটি কাঁপতে থাকে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পেড়িয়ে পরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। একদল পুলিশ গুলি ছোড়ে ভয়ানক ভাবে। ভয়ে ফরিদ মাথার ঝুড়ি ফেলে দৌড়ায় কিন' বেশি দূর যেতে পারে না। আচমকা একটা বুলেট তার গায়ে এসে লাগে। ফিনকি দেয়া রক্তে ভিজে যায় তার ছেঁড়া জামা। খুড়িয়ে খুড়িয়ে রাস্তার পাশ থেকে ডানপাশের সবুজ ঘাসের মাঠে শুয়ে পড়ে সে। মিছিল ভঙ্গ করে সবাই তখন দৌড়াচ্ছে।
যন্ত্রনায় চোখ বন্ধ করতেই মনে পরে মা’ তার জন্য বসে আছে। ছোট বোন টুনি দাড়িয়ে আছে কলোনির রাস্তায়। ফরিদ তার জন্য নিয়ে আসবে মাটির পুতুল। ফরিদ যন্ত্রনা নিয়ে হু-হু করে কেঁদে উঠে, চোখ জুড়ে নেমে আসছে যন্ত্রনার এক ঘুম। কিন' তাকে ঘুমিয়ে পড়লে হবে না। সে নিশ্বাস ধরে রাখতে আকাশের দিকে তাকায় কিন' ক্রমশই শূন্যতা তাকে ঘিরে ফেলে, তার মনে হয় সে উড়ে যাচ্ছে বর্ণমালার মতো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফেরদৌসী বেগম (শিল্পী ) বেশ চমৎকার একুশে গল্প লিখেছেন সকাল'দা। গল্পে ভালোলাগা আর শুভকামনা রইলো। রইলো একুশে শুভেচ্ছা, সেইসাথে ভাষা শহীদদের অমর আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

০২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪